নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ১২ দিন পেড়িয়ে গেলেও বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে ধর্ষণের চেষ্টা মামলার আসামীদের ধরছে না বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। পুলিশের এমন রহস্যজনক নিরবতায় জনমনে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, থানা পুলিশের দালালী করে অবৈধভাবে কোটিপতি বনে যাওয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আবুল কালাম ওরফে ঘুডু কালামের দুই ভাতিজা নয়ন খান ও রানা খান হলেন চাঞ্চল্যকর ধর্ষন চেষ্টা মামলার আসামী। পুলিশের দালাল হওয়ার সুবাধে অল্পতেই ম্যানেজ করে ফেলেন থানা পুলিশ। ফলে আসামীরা প্রকাশ্যেই প্রননাশের হুমকী প্রদান, বাদীকে মামলা তুলে নেয়াসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত রেখেছে। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো ও গ্রেফতার না করার বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মাসুদুজ্জামান জানান, আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ছাত্রলীগ নেতা ও থানা পুলিশের দালাল আবুল কালাম ওরফে ঘুডু কালামের দুই ভাতিজা বলে আসামীদের গ্রেফতার করছেন না এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বাকেরগঞ্জ থানার বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগের দালাল খ্যাত উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আবুল কালাম ওরফে ঘুডু কালামের সখ্যতা রযেছে থানা পুলিশের সাথে। ফলে আবুল কালাম ওরফে ঘুডু কালামের দুই ভাতিজা ধর্ষন চেষ্টা মামলার আসামী হওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতার করছেন না থানা পুলিশ। মামলার বাদী রুবি বেগম জনায়, ঘুডু কালামের কাছ থেকে মোটা অংঙ্কের টাকা নিয়ে আসামী ধরার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে থানা পুলিশ। এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হায়দার জানান, আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আমি থানা থেকে নামলেই আসামীরা কেমনে যেন টের পেয়ে যায়।
উল্লেখ্য গত ১০ মে বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় রুবি বেগম বড় মেয়ে (৭ম শ্রেনীর ছাত্রী) ঘরে রেখে হাসপাতালে ছোট মেয়ে জান্নাতিকে দেখতে যায়। এসময় পাশ্ববর্তী বাড়ির দাওকাঠী গ্রামের ঘুডু কালামের বড় ভাই মো. আব্দুল সোবাহান খানের পুত্র নয়ন খান (২৭) ও আব্দুল রাজ্জাক খানের পুত্র মো. রানা খান (২৫) পানি খাবার অজুহাতে রুবি বেগমের ঘরে প্রবেশ করে (ছদ্মনাম ১২) জোড়পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মেয়ের মা রুবি বেগম ১২ মে বাকেরগঞ্জ থানায় মো. নয়ন খান ও মো. রানা খানকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৭/১৩৫, তারখিঃ-১২/০৫/১৮ইং। কিন্তু মামলা দায়েরের ১২ দিন পেড়িয়ে গেলেও রহস্যজনকভাবে মামলার এজাহারভূক্ত আসামীদের গ্রেফতারে নয় ছয় করছে থানা পুলিশ। গত ১৭ মে আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে মেয়ের মা রুবি বেগম বাকেরগঞ্জ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ঘুডু কালামের কাছ থেকে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা উৎকোচ বানিজ্যে করে ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ বাদীর। এমনকি মামলা দায়েরের পর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না দিয়ে সময় ক্ষেপন করেন বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মাসুদুজ্জামান। এরই মধ্যে মামলা তুলে নিতে ঘুডু কালাম বিভিন্নভাবে বাদীকে হামলা-মামলা ও খুন-জখমের হুমকী-ধামকী অব্যাহত রেখেছে। নাম না প্রকাশের একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘুডু কালাম উপজেলা ছাত্রলীগের দাপট দেখিয়ে থানা ও জমির দালালিসহ বিভিন্ন স্থানে শালিশ মিমাংসার কথা বলে লোকদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার এসব অপকর্মে পুলিশ প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছে থানা পুলিশ বলে অভিযোগ রয়েছে। অপর একটি সুত্র জানায়, ঘুডু কালামের মাধ্যমে থানা পুলিশ বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জন করছে। তাই ঘুডু কালামের কাছে থানা পুলিশ অসহায়। সুত্র জানা, এতবড় লোমহর্ষক ঘটনা তারপরেও পুলিশ চুপ। নির্ভরযোগ্য আরেকটি সুত্র জানায়, থানা পুলিশ ও জমির দালালীসহ সাধারন মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ঘুডু কালাম পৌর এলাকার বর্তমান মেয়রের বাড়ির পাশে লক্ষ লক্ষ টাকার জমি ক্রয় করেছেন। এই টাকায় উৎস কোথায়? এমন প্রশ্ন গোটা বাকেরগঞ্জবাসীর। ঘুডু কালাম কোন চাকরিজীবি নয়, তিনি কোন ব্যবসাও করেন না তাহলে আলাদিনের চেরাগ পেলেন কোথায়? এ বিষয়ে নির্যাতিতা ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী বলেন, বর্তমানে আমি ঘুডু কালাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের ভয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমাকে যারা কলঙ্কিত করেছে প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের কাছে তাদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় অনাকাংখিত ঘটনা ঘটার আশংঙ্কাও রয়েছে। বর্তমানে ভুক্তভোগী পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এব্যাপারে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী।
Leave a Reply